যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিলবোর্ড, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির পাশাপাশি অনলাইনে বিজ্ঞাপনও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা, ফেসবুক, ইমেইল ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অার যেহেতু ই-কমার্স ব্যবসা সম্পূর্ন অনলাইন ভিত্তিক সেহেতু ই-কমার্স উদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানীর পরিচিতি, পন্যের বিজ্ঞাপন পভৃতির জন্য অনলাইনকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স উদ্যোক্তা প্রাথমিক পর্যায়ে মার্কেটিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে ফেসবুককে বেছে নিচ্ছে। অল্প খরচে ব্যবসায়িক পরিচিতির জন্য এটা একটা বড় প্লাটফর্ম। কিন্তু কাস্টমারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর একটি মাধ্যম হল ইমেইল। ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনি কাস্টমারের ক্যাটেগরি অনুযায়ী একই বার্তা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কাস্টমারের কাছে পৌছাতে পারেন, যা অন্য যেকোন মাধ্যমে প্রায় অসম্ভব। ইকমার্সে ইমেইল মার্কেটিং বিষয়টি তিনটি ধাপে আলোচনা করা যেতে পারে।
১। টার্গেট কাস্টমার ও মেইল আইডি কালেকশন।
২। মেইল মার্কেটিং প্লাটফর্ম।
৩। মেইল পাঠানোর নিয়ম কানুন।
১। টার্গেট কাস্টমার ও মেইল আইডি কালেকশান: প্রথমে ফেসবুক থেকে লিস্টে থাকা ফ্রেন্ডদের মেইল আইডি কালেক্ট করা। এটা মাত্র এক মিনিটের ব্যাপার। আপনার যে মেইল আইডির মাধ্যমে ফেসবুক একাউন্ট খুলেছেন সেই মেইল থেকে ফেসবুকের মেইল ইম্পোর্ট করুন। ইম্পোর্ট হলে মেইল কন্টাক্টে অটোমেটিক Facebook নামে একটি ফোল্ডার ক্রিয়েট হবে, যেখানে আপনার লিস্টে থাকা সকল ফ্রেন্ডদের ইমেইলের লিস্ট থাকবে। আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড সংখ্যা ৫০০০ হলে এক মিনিটে বড় একটি কালেকশন হবে। এছাড়া ফেসবুক থেকে বিভিন্ন প্রমোশনাল পোস্ট ও প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মেইল কালেক্ট করা যেতে পারে। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে মাকেটিং এর জন্য বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে ই-মেইল কালেক্ট করতে হবে। যেমন আপনি যদি মনে করেন বাংলােদশের চুয়াল্লিশ হাজার প্রকৌশলীর ইমেইল এড্রেস দরকার তাহলে আপনি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ থেকে তা কালেক্ট করতে পারেন। এভাবে BGMEA, BKMEA, BTMC, Banglacrafts ,REHAB, DCCI, MCCI, BASIS, ECAB, BCS প্রভৃতি কমিউনিটি থেকে মেইল কালেক্ট করা সহজ কারন প্রায় সবারই অনলাইন ডাটাবেজ আছে।
২। মেইল মার্কেটিং প্লাটফর্ম: মেইল কালেকশন হলে পরের ধাপ হল কোন প্লটফর্ম থেকে মেইল পাঠাবেন? আমরা সাধারনত ফ্রি মেইল যেমন gmail, yahoo mail, hotmail, rocketmail, windows live প্রভৃতি মেইল প্লাটফর্ম মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহার করি যা মেইল মার্কেটিং এর জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কারন মার্কেটিং সংক্রান্ত মেইল পাঠাতে দেখলে প্রাথমিকভাবে তারা মেইল গুলোকে স্পাম হিসেবে ডিটেক্ট করবে এবং ভবিষ্যতে এসংক্রান্ত মেইল পাঠানো ব্লক করে দেবে। এছাড়া অনেকে নিজের ডোমেইনের মেইল থেকে মার্কেটিং করার চেষ্টা করেন, এটা আরও ভয়াবহ। কারন এটাও মার্কেটিং টুল হিসেবে ব্যবহারে পারমিটেড না। সুতরাং হোস্টিং প্রভাইডার আপনাকে স্পাম হিসেবে ডিটেক্ট করবে এবং অনেক সময় আপনার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মেইল স্পামে চলে যেতে পারে। সুতরাং ই-মেইল মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজন মেইল হোস্টিং। যে কোন বিশ্বস্ত হোস্টিং প্রভাইডার কোম্পানী থেকে স্বল্প খরচে মেইল হোস্টিং কিনতে পারেন এবং তা মেইল মাকেটিং এর টুল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
৩। মেইল পাঠানোর নিয়ম কানুন: ইমেইল কালেকশান ও প্লাটফর্ম নির্বাচনের পরও সঠিক পদ্ধতিতে মেইল ফরওয়ার্ড না করলেও আশানুরুপ সাড়া নাও মিলতে পারে। যেমন প্রথমত বাল্ক মেইলের ক্ষেত্রে আমরা সকল আইডি To অ্যাড্রেস বারে লিখে পাঠাই, ফলে প্রাপক মেইলটি কাকে কাকে পাঠানো হয়েছে সকলের আইডি দেখতে পায় এবং মেইলটি গণহারে পাঠানো হয়েছে ভেবে তেমন গুরুত্ব দেয়না। এ ক্ষেত্রে সমাধান হল একজনকে To বারে লিখে বাকী সবাইকে Bcc তে রাখতে হবে, তাহলে কেউ কারও আইডি দেখতে পাবেনা এবং মেইলটিকে গুরুত্ব দিবে। এছাড়া মেইল পাঠানোর ফ্রিকুয়েন্সিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি একই মেইল কতক্ষণ বা কতদিন পরপর একই কাস্টমারকে পাঠাবেন সেটির উপরও রেসপন্স রেট নির্ভর করে। সর্বশেষে বার বার একই মেইল কপি না করে একই মেসেজের কনটেন্ট পরিবর্তন কনে ভিন্নভাবে পাঠান। আপনার রেসপন্স অনেক বেড়ে যাবে। আর রেসপন্স যত বাড়বে ততো বাড়বে আপনার কোম্পানীর পরিচিতি, বাড়বে ক্রেতা। আর ক্রেতা বাড়লে বিক্রি তো বাড়বেই এবং আপনি হবেন সফল ইকমার্স উদ্যোক্তা।